প্রেম পরিণতি - The Best Romantic Story
চলুন তাহলে শুরু করা যাক আজকের গল্প ---
প্রেম পরিণতি
ইউটিউব নাম শুনলেই আপনাদের পরিচিত জনপ্রিয় কয়েকজনের মুখ ভেসে আসে তাই না, কি আসছে তো? এরকমই আমার গল্পের নায়কের মুখটাও ভেসে আসে সবার স্বপ্নে কারো বন্ধ চোখের পাতায় আবার কারো বা ইন্সট্রাগ্রামে নতুন আপলোড করা ছবির দিকে তাকিয়ে। কয়েকজন তো আবার পটাপট কয়েকটা কমেন্টও করে দেয়, কেউ আবার কমেন্ট পড়তে যায়। আচ্ছা সে সব বাদ দিয়ে গল্পে ফিরি, প্রথমেই আমার গল্পের নায়কের কথা বলি তার নামটা নীলাদ্রি হলেও, ছোট করে সবাই নীল বলেই চেনে কারোর নীল জান, কারো বা নীল দা। এই নীলাদ্রি মৈত্র নাম করা ইউটিউবার, শুধুমাত্র পশ্চিমবঙ্গ না তার নাম সমগ্র দেশ জুড়ে, শুধু তাই না কয়েকবার বিদেশ সফরও হয়ে গেছে তার। প্রায় কুড়ি মিলিয়ানের উপর সাবস্ক্রাইবার। ভক্ত তার প্রচুর, চব্বিশ বছর বয়সে বেশ অনেকটাই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে, যেমন জনপ্রিয়তা তেমন তার রূপের গুণে অসংখ্য মেয়েরাই তার প্রতি মুগ্ধ, এক কথায় বলতে গেলে আজকালকার বেশির ভাগ মেয়েরা যেরকম পুরুষকে জীবনে চায় সেরকম।
আচ্ছা গল্পের ভিতরে আসা যাক।
পড়ন্ত বিকালে, সূর্য পশ্চিম দিগন্তে পাড়ি দিয়েছে কয়েক মুহূর্তই হলো, সমুদ্রের যতদূর সীমানা দেখা যায় ততদূর পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে সূর্যটা যেন ওই সমুদ্রের মাঝে ডুব দিলো, কিংবা সমুদ্রটা যেন সূর্যকে গ্রাস করে নিলো। কয়েকজন বছর একুশ বাইশের মেয়ে দিঘার সমুদ্র সৈকতে বালির উপর হেঁটে যাচ্ছে, তাদের মধ্যে একজন অপর একজনকে উদ্দেশ্য করে বলল, " গুঞ্জা এবার কিন্তু বারাবারি করছিস তোর পছন্দ না বলে তুই এভাবে বলতে পারিস না" সবাই ওর কথায় সম্মতি জানিয়ে বলল, "দেখ গুঞ্জা হতে পারে তোর কোনো ইউটিউবার কে পছন্দ না তবে আমাদের পছন্দ আর তুই জানিস ও কত হ্যান্ডসাম, ড্যাসিং, ওর ভয়েসটা জাস্ট ওয়াও " পাশ থেকে গুঞ্জনের আর এক বান্ধবী অর্পিতা হাত নেড়ে নেড়ে বলল, " ওর কথা গুলো কি মিষ্টি রে,, ওর হাসিটা, ওর হাঁটা, ওর চুলটাও খুব সুন্দর" আর এক বান্ধবী মল্লিকা বলল, " আর চোখ দুটো, চোখ দুটোর কথা বল কি গভীর, ঠোঁট দুটো কি মিষ্টি আর ওই দাড়িটা ওর মুখের সাথে কি ভালো যায় বল, ওর ফিগার টাও না বলি(বলিউড) হলির(হলিউড) আচ্চা আচ্চা হিরোদের হার মানাবে" গুঞ্জন বিরক্তি নিয়ে বলল, " তুই চুপই কর ওতো এডিট করলে কাক কেও ময়ূর লাগে বুঝলি কে না কে তার জন্যে আমার সাথে ঝগড়া করছে " গুঞ্জন গটগট করে হেঁটে চলে গেল। ওর বান্ধবীরাও পিছু পিছু দৌড় লাগলো।
গুঞ্জন খুব মিষ্টি স্বভাবের একটা মেয়ে, হাসি খুশি থাকে, খুব মিশুকেও, আর খুব চঞ্চল এক জায়গায় স্থির থাকতে পারে না। ও একদমই এই সব সোশ্যাল মিডিয়ায় জনপ্রিয় হওয়া ব্যক্তিদের পছন্দ করে না, ও ভাবে এগুলো সবটাই একটু বারাবারি। এই রোস্টিং, মিমস পোস্ট এসব কিছুই সময় অপচয় ছাড়া আর কিছু না এছাড়া অন্যান্য বিষয় ওর খুব ভালো লাগে। এক কথায় ও মনে করে বাড়ির খেয়ে বনের মোষ তাড়ানো।
গুঞ্জন হোটেলে একশো বিয়াল্লিশ নম্বর ঘরটায় ঢুকতে ঢুকতে নিজে নিজেই বলছে, " এসব ইউটিউবার দের যে কেন এত প্রশ্যয় দেয় ভাবিনা, দুটো ভালো ভালো জিনিসও তো আপলোড করতে পারে তা নয় ঝামেলা আর ঝামেলা আর সেটা নিয়ে এই বাঁদর গুলো এত লাফালাফি করে না, ওই তো হাঁড়ির মতো মুখ, ছাগলের দাড়ির মতো দাড়ি সাথে চাইনিজ দের মতো গোঁফ, আর চোখ গুলো পুরো গরুর চোখের মতো"
পিছন থেকে তন্নী বলল, " খবরদার এসব একদম বলবি না গুঞ্জা নাহলে এখানেই কিন্তু তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ হবে "
- "তোরা ওই একটা ফালতু মানুষকে নিয়ে এত কেন বারাবারি করিস বল তো? "
- " তুই না একদম কারোর ফিলিংস বুঝিস না মন রাখতেও তো বলতে পারিস নীল খুব ভালো "
- "পারবো না "
গুঞ্জা ওয়াশরুমে ঢুকে গেল। রাতে সবাই একসাথে ডিনার করে ঘুমিয়ে পড়লো। ওহ দেখলেন আমি তো পরিচয় করাতেই ভুলে গেছি গুঞ্জন, অর্পিতা, মল্লিকা, তন্নী, আলিশা, নীলাঞ্জনা আর শ্রীমা ওরা সেই ছোটবেলা থেকে বন্ধু একসাথে দিঘা এসেছে বেড়াতে। গুঞ্জন বাদে ওর সব বান্ধবীরাই নীলকে খুব পছন্দ করে একমাত্র ও সব সময় আজে বাজে বলেই যায় আর এই নিয়ে হামেশাই ওদের মধ্যে ঝামেলা লেগেই থাকে।
আজ সকাল সকাল ওরা হোটেল থেকে বেরিয়ে পড়েছে সমুদ্র সৈকতে ঘুরবে বলে, সবাই একসাথে সমুদ্রের নোনা জলে খেলছে লাফালাফি করছে।
এদিকে নীল তার বন্ধুদের সাথে আউটিং এ এসেছে, নীলের কথা মতো ওর এক বন্ধু অজয় ওদের লাইভ ভিডিও করছে, হঠাৎ কোথা থেকে একটা মেয়ে এসে ধাক্কা খেলো ওর সাথে, ও সবে মাত্র পিছনে ঘুরেছে আর মেয়েটা উল্টো দিকে মুখ করে দৌড়াতে দৌড়াতে এসে ওর বুকের উপর, দুজনেই ভর সামলাতে না পেরে পড়লো বালির উপরে, এদিকে অজয় ভিডিও করেই যাচ্ছে ক্যামেরা যে অফ করবে সেদিকে হুঁশ নেই ওদের দিকে দেখে, যেহেতু লাইভ তাই নীলের সব ফ্যানেরা একটার পর একটা কমেন্টস করেই যাচ্ছে।
নীল গুঞ্জার দিকে তাকিয়ে গুঞ্জার চোখ দুটো ভয়ে বন্ধ, নীলের একহাত আচমকাই এরকম ঘটনায় গুঞ্জার কোমড়ে চলে গেছে, গুঞ্জার নরম মোলায়েম চুলগুলো হওয়ায় মুখের সামনে এসে পড়ছে, গুঞ্জার কাঁপা কাঁপা ঠোঁটে বিড়বিড় করে বলছে, " সরি আমি বুঝতে পারিনি পিছনে ওই ফাজিল গুলোর জন্যে এসব হয়েছে আপনি প্লিজ কিছু মনে করবেন না " এতক্ষণে গুঞ্জার বন্ধুরা এসে ওদের দেখে ভয়ে হয়েগেছে, ওরা কেউই নীলকে এতক্ষণ দেখেনি, নীল গুঞ্জার মুখের পাশ দিয়ে ওদের দিকে দেখলে ওরা মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে পড়ে, সবার মুখেই বড় রসগোল্লার আকারের হাঁ হয়ে। নীল আর গুঞ্জা উঠে দাঁড়ায় গুঞ্জা এখনো ওর দিকে তাকায়নি, নীল অজয়ের দিকে কটমট করে তাকিয়ে বলল, " ক্যামেরা টা বন্ধ কর ছাগল " অজয় ওর কথা শুনে তাড়াহুড়ো করে ক্যামেরা বন্ধ করলো।
- "দেখে চলতে পারো না? পাবলিক প্লেসে কেউ এইভাবে দৌড়ায়? কোনো সেন্স নেই? নামেই হাইটে বড় তোমাদের থেকে ওই বাচ্চাটা অনেক ভদ্র "
নীল পাশ দিয়ে যাওয়া একটা বাচ্চাকে দেখিয়ে বললে গুঞ্জা খেঁপে গিয়ে বলল, " আপনারাও দেখে হাঁটতে পারেন না? দেখছেন একটা মেয়ে প্রাণ বাঁচাতে দৌড়াচ্ছে আর আপনারা সাইড না দিয়ে ক্যামেরা নিয়ে শুট করছিলেন? লজ্জা করে না আবার আমাকে বলছে " নীল ওর কথা শুনে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেছে, একবার ওর বন্ধুদের দিকে তাকিয়ে একবার গুঞ্জার বন্ধুদের দিকে তাকালো, ও বলল, " সবাই তো মেয়ে তাহলে কার থেকে বাঁচতে দৌড়াচ্ছিলে?" গুঞ্জার বান্ধবীরা একজনও কথা বলছে না দেখে গুঞ্জা বলল, " এই তারকাটারা কিছু তো বল আমি কি একাই বলবো !"
ওর বান্ধবীরা এক এক করে নীলের সামনে গিয়ে মল্লিকা বলল, " হায় তুমি নীল না? ওয়াও আমি তো ভাবতেই পারছি না, ইউ নোও আমি তোমার কত বড় ফ্যান?" অর্পিতা ওর সামনে গিয়ে বলল, " প্লিজ নীল দা আমাদের সাথে একটা সেলফি তোলো প্লিজ "
গুঞ্জা নীলের নাম শুনে ওদের দিকে কটমট করে তাকিয়ে।
চলবে....
আরো নতুন নতুন Bangla Golpo এবং Poem পড়ার জন্য এক্ষুনি আমাদের সাইটটিকে বুকমার্ক করে রাখুন এবং আমাদের ফেসবুক পেজ টি লাইক করুন যাতে পরবর্তী নতুন কোন Bengali Golpo বা Kobita আমাদের সাইটে প্রকাশ হলে আমাদের সাইটের সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টগুলির দ্বারা আপনি আপডেট পেয়ে যান ।

0 Comments